হিজরাদের কেন করুণার পাত্র বানাবেন?

Comments · 206 Views

 হিজরাদের কেন করুণার পাত্র বানাবেন?

 হিজরাদের কেন করুণার পাত্র বানাবেন?

-এস হাবীব

 সরকারের হিজরাদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। দাবী করা হচ্ছে, এর মাধ্যমে নাকি সমাজে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে। মিডিয়াতেও হিজরাদের নিয়ে অনেক ধরনের প্রচারণা আছে, যার মূল উদ্দেশ্য তাদের প্রতি মানুষের সহানুভূতি তৈরী করা। কিন্তু আসলেই কি তৃতীয় লিঙ্গ ঘোষণা করে তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন হয়েছে, নাকি তাদেরকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে?

 প্রকৃত অর্থে কেউ যদি হিজরাদের জন্য কিছু করতেই চায়, তবে তাকে আগে জানতে হবে, হিজরাদের সমস্যাটা আসলে কী? পৃথিবীতে জন্মের সময় সকল শিশুই সুস্থ স্বাভাবিক হয়ে জন্ম নেয় না। কিছু শিশু জন্মের সময় নানান সমস্যা বা অসুস্থতা নিয়ে জন্ম নেয়। যেমন- কোন শিশু জন্মান্ধ থাকে, কারো জন্মগত কানে সমস্যা থাকে, কারো হাতে সমস্যা থাকেকারো পায়ে সমস্যা থাকেকারো ঠোঁটকাটা হয় ইত্যাদি তেমনি হিজরা হচ্ছে তারা, যাদের জন্মের সময় প্রজনন অঙ্গে সমস্যা বা ত্রুটি থাকে হিজরারা হচ্ছে অস্পষ্ট বা ত্রুটিযুক্ত প্রজনন অঙ্গ নিয়ে জন্মগ্রহণ করা শিশু তাই তারা একধরনের প্রজনন বা লিঙ্গ প্রতিবন্ধী

 দেখা যায়, তাদের ত্রুটিযু্ক্ত লিঙ্গ অনেক সময় অস্পষ্ট হয়। যা দেখে কেউ কেউ ভুল ঝুঝে। যেমন- জন্মের সময় ধাত্রী হয়ত অস্পষ্ট লিঙ্গ দেখে মন্তব্য করলো- বাচ্চা ছেলে হয়েছে কিন্তু বাচ্চা আসলে মেয়ে। তো ঐ বাচ্চাকে সবাই ছোট থেকে ছেলে মনে করা শুরু করলো। ছেলে হিসেবে বাবা-মা বড় করতে থাকলো। পোশাক-আশাক বেশ-ভূষা কিনে দিলো ছেলেদের মত কিন্তু ছেলে যত বড় হয়তার আচরণ আর ছেলেদের সাথে মিলে নামেয়েদের সাথে মিলে বয়ঃসন্ধিতে বিষয়টি আরো প্রকট হয়ে উঠে দেখবেনমাঝে মাঝে সংবাদ আসেঘুম থেকে উঠে অমুক ছেলে মেয়ে হয়ে গিয়েছে কিংবা ঘুম থেকে উঠে তমুক মেয়ে ছেলে হয়ে গিয়েছে আসলে বিষয়টি ঘুম থেকে উঠার সাথে সম্পর্কিত না বরং ঐ ব্যক্তি আগেই ছেলে বা মেয়ে ছিলো কিন্তু লিঙ্গ জন্মগত অস্পষ্ট ছিলো আর সেই অস্পষ্ট লিঙ্গ দেখে কেউ শুরুতে তার ভুল লিঙ্গ চিহ্নিত করেছে, যা বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে স্পষ্ট হয়ে প্রকৃত লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ পেয়ে যায়

 এ ধরনের অস্পষ্ট লিঙ্গ পরিচয়যুক্ত কোন শিশুকে যদি কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যাওয়া হয়, তবে তিনি শিশুটিকে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলে দেনশিশুটি ছেলে নাকি মেয়ে তবে পরিপূর্ণ সুস্থ হতেঅনেক সময় অপরেশনের প্রয়োজন হয় সঠিক চিকিৎসা পেলেশিশুটি পরিপূর্ণ ছেলে বা মেয়ের শরীর লাভ করে। বর্তমানে বাংলাদেশে এ ধরনের শিশুদের চিকিৎসা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২১ সালে ডিসঅর্ডার অব সেক্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগর উদ্বোধন হয়যেখানে লিঙ্গে ত্রুটিযুক্ত শিশুদের চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করা হয়

 কয়েকদিন আগে এ বিষয়টি নিয়ে কথা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু সার্জন মুহম্মদ নজরুল ইসলাম আকাশের সাথে তিনি কথা প্রসঙ্গে বলছিলেনআমাদের কাছে অনেক বাবা-মা আসেনযারা ঠিক বুঝতে পারেন নাতাদের সন্তানের লিঙ্গ পরিচয় কীসন্তান ছেলে নাকি মেয়ে এ অবস্থায় আমরা যখন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে নিশ্চিত বলে দেই তার সন্তান ছেলে অথবা মেয়ে এটা শুনে তারা অনেক খুশি হয় অনেকে খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায় কারণ বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় সে নিশ্চিত হয়, তার সন্তানের পুরুষ অথবা নারী হিসেবে একটি লিঙ্গ পরিচয় আছে। আর পুরুষ অথবা নারী হিসেবে লিঙ্গ পরিচয় লাভ করা অত্যন্ত জরুরী। কেউ চায় না, তার সন্তান পুরুষ বা নারী ভিন্ন অন্য কোন পরিচয়ে থাকুক।

 আসলে একজন মানুষের মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া যেমন তার মানবাধিকারতেমনি একজন পুরুষের পুরুষ এবং একজন নারীর নারী হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া তার মানবাধিকার কিন্তু তাকে যদি নারী বা পুরুষ লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি না দিয়ে তৃতীয় কিছু বলে স্বীকৃতি দেয়া হয়তখন তার মানবাধিকার নিশ্চিত তো হয়ই না বরং সে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এজন্য আসলে হিজরাদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া ভুল পদ্ধতি হিজরারা তো পুরুষ অথবা নারী তারা তো তৃতীয় কিছু নয় তাদের তৃতীয় লিঙ্গ বলে দাবী করার অর্থই হচ্ছে তাদেরকে মূল সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া।

 আসলে হিজরারা এক ধরনের জন্মগত রোগে আক্রান্ত তাদের রোগের নামডিজঅর্ডার অব সেক্সুয়াল ডেভেলপমেন্ট। আর রোগের উপর নির্ভর করে কোন নতুন লিঙ্গ হয় না যদি রোগের উপর নির্ভর করে নতুন লিঙ্গ তৈরী করতে হয় তবে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীকে আলাদা ক্যান্সার লিঙ্গ বলতে হবে কিংবা অথবা অন্ধত্বের জন্য অন্ধত্ব লিঙ্গ বলতে হবে কিংবা মানসিক অসুখ সিজোফ্রেনিয়া আক্রান্তদের আলাদা লিঙ্গ বলতে হবে যদি আমরা তাদের তেমনটা না বলিতাহলে হিজরাদেরকে আলাদা লিঙ্গ বানাবো কেন?

 অনেকেই ভাবেহিজরাদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শণ করতে হবে এটা আসলে ভুল কথা। একজন অসুস্থ মানুষকে যদি আপনি চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করেনতবে সেটাই তার প্রতি প্রকৃত সহানুভূতি প্রদর্শন। সেটা না করে আপনি তার অসুস্থতাকে যতই স্বীকৃতি দেন, সেটা আসলে প্রকৃত সহানুভূতি প্রদর্শন হয় না, বরং অসুস্থতাকে আড়াল করা হয়।

 আসলে যেসব কথিত সেক্যুলার-লিবারেল বা মানতাবাদী বা এনজিও গোষ্ঠী হিজরাদের স্বীকৃতির কথা বলে, তাদেরকে আমি কখন দেখিনি হিজরাদের চিকিৎসা দিয়ে স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দেয়ার জন্য কথা বলতে। বরং হিজরাদের চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করার প্রয়াসে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২১ সালে ডিসঅর্ডার অব সেক্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের উদ্বোধনের পর দেখেছি তাদেরকে ঐ বিভাগের বিরোধীতা করতে তারা বলছেএর মাধ্যমে নাকি হিজরাদের অধিকার হরণ হবে!

 আসলে কিছু মানুষ আছেযারা সমস্যা নিয়ে ব্যবসা করতে চায়রাজনীতি করতে চায় কিন্তু সমস্যার সমাধান চায় না কারণ সমস্যার সমাধান হয়ে গেলে তো তারা সমস্যাকে পূজি করে ব্যবসা বা রাজনীতি করা যায় না আজকে হিজরাদের কথা বলে যারা বিদেশী এনজিওদের থেকে ফান্ডিং পায়তারা তো কখনই চাইবে না হিজরারা সুস্থ হয়ে যাক তারা যদি শিশু অবস্থায় সুস্থ হয়ে যায়তবে তো সমাজে হিজরা বলে কেউ থাকবে নাফলে হিজরাদের নিয়ে ব্যবসা বা রাজনীতি করারও সুযোগ থাকবে না

 এজন্য যখন মিডিয়ায় হিজরাদের জন্য মায়াকান্না দেখি কিংবা পাঠ্যপুস্তকে সহানুভূতি তৈরীর করতে বলা হয়তখন তা মেনে নিতে পারি না কারণ সে কেন আমার সহানুভূতি চাইবেকেন তাকে করুণার পাত্র করতে হবে? কেন তাকে পরনির্ভরশীল হতে হবে? কেন থাকে ভাতা নিতে হবে? তার তো অধিকার সু-চিকিৎসা পাওয়ার, সুস্থ স্বাভাবিক জীবন ধারণ করার সে সুস্থ থাকলে তো তার সহানুভূতি দরকার হবে নাকারো করুণার পাত্র হয়েও থাকতে হবে না। তাকে ভাতা কিংবা কোটা সুবিধা দিয়ে পরনির্ভরশীল না করে সু-চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে দিন, স্বনির্ভর করে দিন, এটাই তার জন্য বিশাল প্রাপ্তি।

 এজন্য যদি হিজরাদের জন্য প্রকৃত ভালোবাসা প্রদর্শন করতেই হয়তবে সবার আগে দরকার তাদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা তবে এ জন্য বাবা-মায়েদের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা তৈরী করতে হবেযেন একটি শিশু জন্মের পর পর লিঙ্গে কোন সমস্যা দেখামাত্র তাকে নিয়ে চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হয় এবং রাষ্ট্রেরও দায়িত্ব সেই শিশুটির সু-চিকিৎসা নিশ্চিত করা এর মাধ্যমেই শিশুটি সুস্থ স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবেসেটাই হবে তার মানবাধিকার কিন্তু তাকে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনের ব্যবস্থা না করে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে হাজার বার স্বীকৃতি দিলে কখনই তার মানবাধিকার নিশ্চিত হবে না

 

Comments